পিত্তথলিতে পাথরের সমস্যা আমাদের অনেকেরই হয়ে থাকে। তবে এই রোগ সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক বুঝতে পারেন না। যে কোনো রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকলে সে রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়।
অনেকর মনে প্রশ্নজাগে, এই পাথর কি সত্যি সত্যি পথের কুড়িয়ে পাওয়া নূড়ি পাথরের মতো, নাকি অন্য কিছু? কিভাবে বোঝা যাবে পিত্তথলিতে আপনার পাথর হতে পারে?
পাথর আসলে কী
পিত্তথলির পাথর আসলে ছোট ছোট বালুর দানার মতো থেকে শুরু করে মটরের দানা বা তার চেয়েও বড় শক্ত দানাদার বস্তু, যা বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। এটা নির্ভর করে কী পদার্থ দিয়ে পাথর তৈরি হয় তার ওপর।
কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন বা ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি এই পাথরগুলো পিত্তরসের সঙ্গে মেশানো অবস্থায় থাকে এবং হালকা বাদামি, ময়লাটে সাদা বা কুচকুচে কালো রঙের হতে পারে। পেটের ডানদিকে যকৃতের পেছনে ও তলার দিকে পিত্তথলি থাকে। পিত্তরস তৈরি করাই এর কাজ। খাবার হজমে, বিশেষ করে চর্বিজাতীয় খাবার হজম করতে পিত্তরস দরকার হয়। নানা কারণে পিত্তথলিতে বিভিন্ন পদার্থ জমে গিয়ে পাথরের সৃষ্টি করে।
কীভাবে লক্ষণ বুঝবেন পিত্তথলিতে পাথর
১.পিত্তথলিতে পাথর হলে এতে প্রদাহ হয়, যাকে কোলেসিস্টাইটিস বলা হয়। তখন পেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা মিনিট খানেক থেকে ঘণ্টাখানেক স্থায়ী হতে পারে।
২. পেটের পেছন দিকে, কাঁধে, পেটের মাঝ বরাবর এমনকি বুকের ভেতরও ধীরে ধীরে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে বমিভাব বা বমি, হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে।
৩. অনেক সময় পাথর পিত্তথলি থেকে বেরোতে গিয়ে পিত্তনালিতে আটকে যায় এবং তখন বিলিরুবিনের বিপাক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন জন্ডিসও হতে পারে।
৪. রোগ নির্ণয়ের জন্য এই উপসর্গের পাশাপাশি পেটের আলট্রাসনোগ্রাম যথেষ্ট। পাথরের অবস্থান জানতে বা প্রয়োজনে বের করতে ইআরসিপি জাতীয় পরীক্ষা করা যেতে পারে।
৫. পেটের আলসার, যকৃতের কোনো সমস্যা এমনকি হৃদরোগেও এ উপসর্গের কাছাকাছি ধরনের ব্যথা হতে পারে বলে সেগুলোর অবস্থাও নির্ণয় করে নেয়া দরকার।
চিকিৎসা
প্রদাহ ও তীব্র ব্যথার সময় কোনো অস্ত্রোপচার করা হয় না। এ অবস্থায় সাধারণত কয়েক দিনের জন্য মুখে খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে প্রাথমিক উপশমের চেষ্টা করা হয়। পিত্তথলি ফেলে দেয়ার অস্ত্রোপচার সপ্তাহ দুয়েক পর বা দু-তিন মাস পর করলেও ক্ষতি নেই। পেট কেটে বা ফুটো করে- দু’ভাবেই এই অস্ত্রোপচার করা যায়। তবে পিত্তনালিতে পাথর আটকে গিয়ে থাকলে ইআরসিপি যন্ত্রের সাহায্যে পাথর বের করে আনা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন