ক্যানসারের যে লক্ষণগুলো খেয়াল রাখা উচিত - Slogaan BD

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

ক্যানসারের যে লক্ষণগুলো খেয়াল রাখা উচিত

 চিকিৎসকরা বলছেন, উপসর্গ যদি ছোটখাটোও হয়, তার পরেও সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা কিছু কিছু ক্যান্সার শনাক্ত করা কঠিন এবং অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই এবিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু এর মধ্যেই অনেক সময় পার হয়ে যায়।

বেশিরভাগ ক্যানসারই চিকিৎসা যোগ্য এবং যেসব রোগীরা খুব মারাত্মক পর্যায়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আগে চিকিৎসা করানোর সুযোগ পান তারা একটি ভালো ফলও পান।


সমস্যা হচ্ছে, অনেক সময় আমরা ছোট-খাট উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে চাইনা বা সেগুলোকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেই না। এসব উপসর্গকে আমরা এড়িয়ে চলি যা আসলে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে ক্যানসারের এমন ১০টি সাধারণ উপসর্গের বিষয়ে জানিয়েছে যেগুলোকে অবহেলা করা উচিত নয় বলে মনে করে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি।

কারণ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া
ক্যানসার আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই কোন না কোন সময় ওজন হারাতে শুরু করে। যখন আপনি কোন ধরনের কারণ ছাড়াই ওজন হারাতে শুরু করেন, এটাকে বলা হয় ব্যাখ্যাহীন ওজন হারানো। এতে চিন্তার কারণ আছে।

ব্যাখ্যাহীনভাবে বা কোন কারণ ছাড়াই পাঁচ কেজি বা তার বেশি ওজন কমলে সেটি ক্যানসারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে। অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালী বা ফুসফুসের ক্যানসারের ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়ার এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।

জ্বর
ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে সাধারণ একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। অবশ্য যে স্থানে ক্যানসার উৎপন্ন হয়েছে সেখান থেকে দেহের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে তখন প্রায়ই জ্বর দেখা দেয়। ক্যানসারে আক্রান্ত সবাই কোন না কোন সময় জ্বরে ভোগেন। বিশেষ করে যদি ক্যানসার বা এর চিকিৎসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে তাহলে জ্বর বেশি হয়।

অনেক ক্ষেত্রে জ্বর ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গও হতে পারে। যেমন লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা।

ক্লান্তি
এখানে ক্লান্তি বলতে বোঝায় চরম ক্লান্তিভাব যা বিশ্রাম নেয়ার পরও দূর হয় না। ক্যানসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু ক্যানসার যেমন লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শুরুর দিকেই ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। কিছু কোলন বা মলাশয় ও পাকস্থলীর ক্যানসারের ক্ষেত্রে রক্তপাত হতে পারে তবে এটা সবক্ষেত্রে হয় না। এর কারণেও ক্যানসারের সময় ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

ত্বকে পরিবর্তন
ত্বকের ক্যানসার ছাড়াও আরো কিছু ক্যানসার রয়েছে যাতে আক্রান্ত হলে ত্বকে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এর লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে রয়েছে:
- ত্বক কালো হয়ে যাওয়া বা হাইপারপিগমেনটেশন।
- ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস।
- ত্বক লাল হয়ে যাওয়া। চুলকানি।
- মাত্রাতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি।
- অন্ত্রের ক্রিয়া বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন।
কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা আপনার মলের আকারে দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন মলাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

অন্যদিকে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা, প্রস্রাবে রক্তপাত, বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন যেমন আগের তুলনায় কম বা বেশি প্রস্রাব করা ইত্যাদি মূত্রাশয় বা প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

যে ক্ষত ভাল হয় না
অনেকেই জানেন যে দেহে যদি কোন আঁচিল থাকে যেটি বাড়ে বা ব্যথা হয় বা সেটি থেকে রক্তপাত হয় তাহলে সেটি ত্বকের ক্যানসারের একটি লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু শরীরে যদি কোন ক্ষত থাকে যেটি চার সপ্তাহের পরও ভাল হয় না বা সেরে যায় না, এমন ক্ষতের প্রতিও আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত।

মুখে যদি এমন কোন ক্ষত হয় তাহলে সেটি মুখের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। আপনার মুখের যেকোন পরিবর্তন যদি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন চিকিৎসক বা ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত।

শিশ্ন বা জরায়ুতে ক্ষত হয় কোন ধরণের সংক্রমণ কিংবা ক্যানসারের প্রাথমিক অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। এমন অবস্থায় একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ নেয়া উচিত।

রক্তপাত
ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় কিংবা তা ছড়িয়ে পড়ার পর অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্তপাত ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

অন্যদিকে যদি মলের সঙ্গে রক্তপাত হয় তাহলে এটি মলাশয় বা মলদ্বারে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এনডোমেট্রিয়াম বা জরায়ুর আবরণে সার্ভিক্যাল ক্যানসারের কারণে যোনিপথে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে।

এছাড়া মূত্রের সঙ্গে রক্ত পড়লে সেটি মূত্রাশয় বা কিডনি ক্যানসারের কারণে হতে পারে। স্তনবৃন্ত বা স্তনের বোটা থেকে রক্ত-মিশ্রিত তরল বের হলে সেটি স্তন ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

শরীরের যে কোন স্থান শক্ত হয়ে যাওয়া
অনেক ক্যানসার ত্বকের মাধ্যমে শনাক্ত করা যেতে পারে। এ ধরণের ক্যানসার সাধারণত স্তন, অণ্ডকোষ, গ্রন্থি এবং শরীরের নরম টিস্যুতে হয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে দেহে শক্তভাব বা মাংস জমে আছে- এ ধরণের অনুভূতি হয়। এটা এসব ক্যানসারের প্রাথমিক বা বিলম্বিত উপসর্গ হতে পারে।

গিলতে অসুবিধা
ক্রমাগত বদহজম বা কোন কিছু গিলতে গেলে সমস্যা হলে সেটা ইসোফ্যাগাস, পাকস্থলী বা গলার ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।

টানা কাশি বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন
টানা কাশি ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

এছাড়া কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন আসলে তা স্বরযন্ত্র বা থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যানসারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।

তবে যাই হোক না কেন, এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত সব উপসর্গই ক্যানসার ছাড়াও অন্য আরও অনেক কারণেই দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের সাধারণ কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকলে রোগীরা হয়তো অকালেই তাদের মৃত্যু ঠেকাতে সক্ষম হবেন। আর একারণে এসব উপসর্গকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া খুবই জরুরি।

 ক্যান্সার যতো আগে ধরা পড়বে, ততই ভাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্যান্সারের চিকিৎসায় সফলতার হার কতখানি সেটা কোন অঙ্গের ক্যান্সার তার ওপরেও নির্ভর করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Post Top Ad

{SCOpenGraph image=http://site.com/link-to-homepage-image.jpg}