হিন্দুস্থান বিজয়ী মুহাম্মদ বিন কাসিম (রহ.) - Slogaan BD

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

হিন্দুস্থান বিজয়ী মুহাম্মদ বিন কাসিম (রহ.)

জাহেলিয়াত ইসলাম-পূর্ব আরব ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে হ্যাঁ, অন্যদের মতো তাদেরও ছিল ব্যবসা ও কৃষিকর্ম। তাদের ছিল ইয়েমেন ও হীরার মতো বাণিজ্যিক কাফেলার গল্প। ভারত ও লোহিত সাগর হয়ে ইয়েমেনের বাণিজ্য কাফেলার যাতায়াত ছিল ভারতে। ইসলাম এলো। আরব উপদ্বীপ জয় করে শাম ও পারস্য তাদের করতলগত। দৃষ্টি তাদের এখন রূপকথা ও গল্পবাজদের আশ্রয় ভারতের দিকে। কীভাবে ইসলামের প্রথম শতাব্দীতে একের পর এক ভারতে ব্যর্থ অভিযান। কেনই বা এ অঞ্চলে অভিযান পরিচালনায় খোলাফায়ে রাশিদিনের এক ধরনের অনীহা? অবশেষে কীভাবে এলো বিজয়মাল্য? কোন সে বীরসেনানীর নেতৃত্বে বিজিত হলো ভারত, কেনই বা তিনি এত প্রসিদ্ধ আর কীভাবে নিরপরাধ এ বীরের জীবনের সমাপ্তি হলো হৃদয়বিদারক?
খোলাফায়ে রাশিদিন ও ভারত পর্যবেক্ষণ
হিজরি ১৫, বাহরাইন ও ওমানের গভর্নর উসমান বিন আবুল আস ভারত ও সিন্ধ অভিযানে ওমর (রা.) এর অনুমতি প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে শামের গভর্নর মুয়াবিয়া (রা.)ও সাইপ্রাস অভিযানের অনুমতি চেয়ে পত্র পাঠান। কিন্তু বরাবরই তিনি জলপথে অভিযান পরিচালনায় দ্বিধা প্রকাশ করেন। হয়তো খেলাফতের কেন্দ্রবিন্দু মদিনা থেকে বিজিত অঞ্চল বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করতেন। তবে ওমর (রা.) এর এ কৌশল তৃতীয় খলিফা ওসমান (রা.) এর সময় পরিবর্তন হয়। তিনি মুয়াবিয়া (রা.) কে সাইপ্রাস যুদ্ধের এবং ইরাকের গভর্নর আবদুল্লাহকে ভারতের দিকে মনোযোগ দেওয়ার আদেশ দেন। আবদুুল্লাহর কমান্ডার হাকিম ভারত পর্যবেক্ষণ করে খলিফার কাছে ভারতে সমুদ্র, ফলমূল, চোর-ডাকাত ও সৈন্যবাহিনী ইত্যাদি প্রসঙ্গে রিপোর্ট পেশ করেন।
অবশ্য ওসমান (রা.) এর শাহাদতের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, আবদুল্লাহ বিন জুবাইরের খেলাফতের প্রচেষ্টা এবং এজিদের মৃত্যু ছাড়াও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় ভারত ও সিন্ধের অভিযান বন্ধ হয়ে যায়।

সিন্ধ ও সেনাপ্রস্তুতি
আবদুল্লাহ বিন মারওয়ানের ক্ষমতায় আসা, বিরোধীদের দমন এবং সব বিদ্রোহের আঁতুড়ঘর ইরাকের গভর্নর হিসেবে লৌহমানব হাজ্জাজ বিন ইউসুফের অভিষেক আবারও মুসলিম বিজয়াভিযানের ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসে। তৎকালীন সিন্ধের (পাকিস্তান) রাজা দাহিরের পার্শ্ববর্তী মাকরান অঞ্চলে উমাইয়া শাসন-বিরোধীদের কারণে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কয়েকবার ভারত অভিযান ব্যর্থ হয়। 
তবে হাজ্জাজকে ভারতে চূড়ান্ত অভিযানে বাধ্য করে, শ্রীলংকা থেকে মৃত মুসলিম ব্যবসায়ীদের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের বহনকারী জাহাজ সিন্ধের সমুদ্র দস্যু দ্বারা লুণ্ঠিত হয়। হাজ্জাজ অসহায় নারীদের উদ্ধার ও দস্যুদের দমনে দাহিরের সহযোগিতা না পেয়ে পরপর আবদুল্লাহ বিন নাবহান ও বুদাইলের নেতৃত্বে দুটি অভিযানে ব্যর্থ হন। অবশেষে তিনি হিজরি ৯৬ সালে আবদুল্লাহ বিন মারওয়ানের অনুমতি নিয়ে চূড়ান্ত অভিযানে অগ্রসর হন। নিজ চাচাতো ভাই সপ্তদশী মুহাম্মাদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে ভারতের দিকে সৈন্য মার্চ করান। 
কিশোর বীর
বারো হাজার সৈন্য নিয়ে তিনি মাকরান হয়ে আজকের করাচি অবরোধ করেন। তৎকালীন উচ্চবর্ণের হিন্দু দ্বারা নির্যাতিত নিম্নবর্ণের হিন্দুরা মুসলিমদের সহযোগিতা করেন। তৎকালীন পাঁচশত ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত অত্যাধুনিক মিনজানিক দ্বারা শহরের দেয়ালে একের পর এক আক্রমণে শহরে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে মুসলিম বাহিনী শহরে প্রবেশ করে। কোনোভাবে রাজা দাহির প্রাণ নিয়ে শহর থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মুহাম্মাদ বিন কাসিম শহরের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। বিন কাসিম এরপর একের পর এক শহর সন্ধি কিংবা শক্তি প্রয়োগে জয় করে মিহরান নদীর পাড়ে পৌঁছান। ওপারে রাজা দাহির হাতিসহ বিশাল সৈন্য নিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত। কিন্তু পরাজিত হয়ে তারা পলায়ন করে। রাতে আবার দাহির আক্রমণ করেন; কিন্তু এবার তিনি নিহত হন। 
রাজা দাহিরের পরাজয় ও নিহত হওয়াটা মুসলমানদের সামনে অগ্রসর হওয়াকে বেশ বেগবান করে। সিন্ধের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মুলতান জয় করে তারা স্বর্ণসহ অনেক গনিমত অর্জন করেন এবং হাজ্জাজের কাছে পাঠিয়ে দেন। তারপর বিন কাসিম রাজা দাহিরের পলাতক ছেলের ঘাঁটি ব্রাহ্মণাবাদ জয় করেন। চারদিকে যৌবনের হাতছানি দেওয়া মুহাম্মদ বিন কাসিমের সাহসিকতা ও ইসলামের সাম্যপূর্ণ আচরণের কথা ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে তাকে নিয়ে কবিতাপাঠ ও গুণ-কীর্তন চলতে থাকে।

বিজয়াভিযানের সমাপ্তি!
মুহাম্মদ বিন কাসিম বিশাল বিজয়ের পর সিন্ধের সীমানা থেকে বর্তমান বাংলাদেশে বিজয়াভিযান পরিচালায় হাজ্জাজের অনুমতি পেলেন এবং ১০ হাজার সৈন্যের বহর তৈরির কাজ শুরু হলো। কিন্তু তিনি তার অভিযানের অনুপ্রেরণাদাতা হাজ্জাজের মৃত্যু সংবাদ পেলেন। পরের বছর ৯৬ হিজরিতে আবদুল্লাহ বিন মারওয়ানের মৃত্যু সংবাদ জানতে পারলেন। তাদের মৃত্যুতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে যায়। ক্ষমতার মসনদে আসে হাজ্জাজ ও আবদুল্লাহ বিন মারওয়ানবিরোধী শক্তি, যারা পূর্ব প্রশাসনের ঘনিষ্ঠজনদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়। 
মহান বীরের হৃদয়বিদারক সমাপ্তি!
যেখানে এমন বীরকে সাদরে গ্রহণ করে নেওয়ার জন্য ইরাকের রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল নেমে আসবে, সেখানে শুধু তার পদচ্যুতির আদেশই পাঠানো হলো না, তাকে তার বিরোধী রাজশক্তি অপরাধীদের মতো বেড়ি পরিয়ে ওয়াসেতের কারাগরে নিক্ষেপ করে। কারাগারে নির্মম নির্যাতনের কথা নিজ কবিতায় রেখে গেছেন।
ইরাকের ইতিহাসের শিক্ষক বলেন, বিন কাসিমের হাজার বছর আগে আলেকজান্ডার এ ভারতের সামান্য অংশ দখল করতে পারেনি, সেখানে ১৭ বছরের কিশোর খুব সহজেই মাত্র তিন বছরের কম সময়ে বিশাল এলাকা জয় করেন। এক ইংরেজ ঐতিহাসিক বলেন, তিনি যদি তার অভিযান অব্যাহত রাখতেন, চীন পর্যন্ত কোনো বাধা তার জন্য বাধা হতো না। ইরাকের বিখ্যাত সমরবিদ মাহমুদের ভাষায় আজকের দ্রুতগামী বিমানেও বিন কাসিমের এ দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ার আগে চিন্তা করতে হয়, সেখানে তারা হেঁটে বা ঘোড়ায় করে জয় আনলেন! যা আজও ইতিহাস ও সমরবিজ্ঞানের জটিল প্রশ্ন!
ইসলাম আদর্শ ও জাতপাত নির্বিশেষে মানুষের হৃদয় জয়ই ছিল এ অভিযানের প্রাণ। তার নেতৃত্বে দাওয়াত, মসজিদ ও মসজিদকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটে। ভারতে তাই মালিক বিন দিনারের মতো মানুষের আগমন ঘটে। মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করে। এ মহান বীরের বিয়োগান্ত ঘটনার কয়েক শতাব্দী পর আফগানিস্তান থেকে তুর্কি বীর ভারতের রাজধনী জয় করেন। 
মুজাহিদুল ইসলাম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Post Top Ad

{SCOpenGraph image=http://site.com/link-to-homepage-image.jpg}