লজ্জা অনৈতিক কাজের পথে ঢাল - Slogaan BD

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

লজ্জা অনৈতিক কাজের পথে ঢাল

মানুষ আপন ইচ্ছাশক্তিকে যখন ভালো কাজে ব্যয় করে তখন সে চায় তার সে কাজ, সে ব্যবহার সবাই যেন জানে। কারণ, এটা সম্মানের প্রতীক। মর্যাদার ক্ষেত্র। পক্ষান্তরে কেউ যখন আপন ইচ্ছাধিকার অবৈধ-অনৈতিক কাজে ব্যয় করে সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে সেটাকে গোপন রাখতে। সে কিছুতেই চায় না তার এ কাজ সম্পর্কে মানুষ জানুক। কেউ জেনে গেলে সে সংকুচিত হয়, লজ্জিত হয়। এটাই হলো হায়া বা লজ্জা।

আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে ভালো আর মন্দ, পাপ আর নেক উভয় কাজের পূর্ণ ইচ্ছাধিকার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। বান্দা ইচ্ছে করলে স্বীয় ইচ্ছাশক্তিকে ভালো কাজেও ব্যবহার করতে পারে। আবার ইচ্ছে করলে মন্দ কাজেও ব্যবহার করতে পারে। ভালো কাজে ব্যবহার করলে বান্দা সমাজেও হয় সম্মানিত, আখেরাতেও রয়েছে তার জন্য বিরাট প্রতিদান। কিন্তু মন্দ কাজে ব্যবহার করলে সে সমাজেও লাঞ্ছিত হয়, পরকালে তো শাস্তির বিধান রয়েছেই।
লজ্জা মানুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। যে যত বেশি লজ্জাশীল হয় সে ততটাই মানুষের কাছে প্রিয় হয়, মর্যাদাবান হয়। কারণ, যার মধ্যে লজ্জাশীলতা আছে সে কখনও অবৈধ-অনৈতিক কাজে জড়ায় না, জড়াতে পারে না। যখনই কোনো মন্দ কাজের সম্মুখীন হয়, সে সংকোচ বোধ করে মন্দে লিপ্ত হতে। এ লজ্জাই তার মন্দ কাজে প্রতিবন্ধক হয়। এ জন্যই তো লজ্জাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক আনসার ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। যিনি তার ভাইকে লজ্জার ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও। কেননা লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’ (বোখারি : ২৪, ৬১১৮; মুসলিম : ৩৬)।
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ঈমানের সত্তরোর্ধ্ব কিংবা ষাটোর্ধ্ব শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা, আর সর্বনিম্নটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি শাখা। (মুসলিম : ৩৫)।
এ লজ্জাই মানুষকে সব ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখে। যার মধ্যে যত বেশি লজ্জাশীলতা আছে সে ততই পাপ কাজ ও মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকে। গোপনে কোনো পাপে জড়ালেও প্রকাশ্যে সে কিছুতেই মন্দ পথে পা বাড়ায় না।
মানুষের ভেতর থেকে যখন লজ্জা দূর হয়ে যায় তখন সে কুণ্ঠা বোধ করে না পাপে জড়াতে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সর্বদা সে গোনাহে লিপ্ত থাকে, অবৈধ কাজে জড়িয়ে থাকে; কিন্তু একটুও সংকোচ বোধ হয় না তার। রাসুলে করিম (সা.) বলেন, নবুয়তের সূচনাকাল থেকে যে বিষয়গুলো মানুষের মাঝে (অবিচ্ছিন্নভাবে) বিদ্যমান আছে সেসবের অন্যতম হলোÑ তুমি যখন নির্লজ্জ হয়ে পড়বে তখন যা ইচ্ছা তা-ই করো। (বোখারি : ৬১২০)।
নির্লজ্জতা মানুষকে পশুর মতো বানিয়ে দেয়। তখন সে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। কোনো কিছুই আর তার বাধা হয় না। তাই লজ্জা মানুষের চরিত্রের অন্যতম একটি ভূষণ, যা মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচিত করে। বয়ে আনে তার জন্য অগণিত কল্যাণ। রাসুল (সা.) বলেন, লজ্জাশীলতা শুধুই কল্যাণ নিয়ে আসে। (বোখারি : ৬১১৭)।
লজ্জা তো মুসলিম-অমুসলিম সবার মধ্যেই আছে, থাকবে। থাকুক। এটাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে মুসলিম-মোমিন বান্দাদের লজ্জাশীলতা হয়ে থাকে ভিন্নতর। তারা শুধু লোকচক্ষুর ভয় করে না। মানুষকে লজ্জা করে না। তারা প্রকৃত লজ্জা করে আল্লাহ তায়ালাকে। তখন গোপনে পাপ করার ইচ্ছেটাও ফিকে হয়ে যায়। মানুষ তো দেখে শুধু প্রকাশ্যে। আল্লাহ তায়ালার জন্য তো গোপন আর প্রকাশ্য নেই। আঁধার আর আলো নেই। সর্বাবস্থায় তিনি বান্দাকে দেখেন, দেখছেন। কোনো ব্যক্তি যখন আল্লাহর সঙ্গে লজ্জা অবলম্বন করবে তখন পাপে জড়ানো তার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হবে না। চাই প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে। আর এটাই হলো প্রকৃত লজ্জা। 
রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা অবলম্বন করো। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আলহামদু লিল্লাহ, আমরা লজ্জা অবলম্বন করি। নবীজি (সা.) তখন বললেন, আমি তো এটা বলিনি। বরং আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা হবে এমনÑ তুমি মাথা হেফাজত করবে, মাথা যা কিছু ধারণ করে তাও হেফাজত করবে, পেট হেফাজত করবে, পেট-সংলগ্ন যা কিছু আছে তাও হেফাজত করবে, আর মৃত্যুকে স্মরণ করবে, স্মরণ করবে (মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে) চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাটিতে মিশে যাওয়াকেও। আর যে পরকাল কামনা করে সে তো দুনিয়ার জৌলুস বর্জন করে। এগুলো যে করতে পারল সে-ই আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা অবলম্বন করল। (জামে তিরমিজি : ২৪৫৮)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Post Top Ad

{SCOpenGraph image=http://site.com/link-to-homepage-image.jpg}