জেনে নিন সাফল্যের ৫ নিয়ম - Slogaan BD

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

জেনে নিন সাফল্যের ৫ নিয়ম

আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। মানুষ আমার কাছে সব সময় জানতে চায়, সাফল্যের সূত্র কী? সাফল্যের সূত্রের দীর্ঘ সংস্করণটি হলো, আমি সব সময় পাঁচটি নিয়ম মেনে চলেছি। আপনাকে বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়ন হতে হবে না। অ্যাকশন হিরো বা তেমন কিছু হওয়ার চেষ্টা না করলেও চলবে। যা-ই করুন না কেন, তাতে যদি সবচেয়ে ভালো করতে চান, তাহলে এই নিয়মগুলো আপনার জন্যই।

আমার প্রথম নিয়ম হলো, লক্ষ্য খুঁজে বের করুন এবং তার পেছনে লেগে থাকুন। উদ্দেশ্য না থাকলে, লক্ষ্যহীন হলে আপনি কেবল ভাসতে থাকবেন এবং সুখের মুখ দেখবেন না কোনো দিন। আমি বেড়ে উঠেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। সে যুদ্ধে জার্মানির সঙ্গে অস্ট্রিয়াও পরাজিত হয়েছিল। সে সময় হতাশা ছিল, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিল ভয়ানক। আমি তা থেকে রেহাই চেয়েছিলাম, খুঁজছিলাম পালানোর পথ। ভাগ্য ভালো, একদিন স্কুলে আমেরিকা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখলাম। আমি ঠিক জানতাম, ওই আমেরিকাই আমার গন্তব্য। প্রশ্ন ছিল, কী করে আমেরিকায় যাব?

একদিন কপালগুণে বডিবিল্ডিং–বিষয়ক একটি ম্যাগাজিন চোখে পড়ল। প্রচ্ছদে ছিল দারুণ পেশিবহুল এক লোকের ছবি। তাঁর নাম ছিল রেগ পার্ক। মিস্টার ইউনিভার্স থেকে যিনি হয়ে উঠেছিলেন হারকিউলিসখ্যাত তারকা। লেখাটি রীতিমতো গোগ্রাসে গিলে ফেললাম। জানলাম, ইংল্যান্ডের লিডসে ভীষণ দারিদ্র্যের সঙ্গে কতটা লড়াই করে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি এবং শরীর গঠনের জন্য কী করে দিনে পাঁচ ঘণ্টা খাটতেন। রোজ নিজেকে ঝালিয়ে নিতেন, ঝালাতেই থাকতেন ঝালাতেই থাকতেন। ফলে শেষমেশ তাঁর নামের আগে যুক্ত হলো মিস্টার গ্রেট ব্রিটেন।

তারপর মিস্টার ইউনিভার্স। তারপর দ্বিতীয়বারের মতো মিস্টার ইউনিভার্স এবং তৃতীয়বারের মতোও জিতে নিলেন খেতাবটি। তারপর হঠাৎ একদিন ইতালির রোমে পা রাখলেন। ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্টুডিও সিনেসিতায় গিয়ে অভিনয় করলেন হারকিউলিস ছবিতে। তাঁর ওপর যত পড়লাম, ততই আমার লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে উঠল। ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে ঠিক করলাম, যত পরিশ্রমই করতে হোক না কেন, যত যুদ্ধই করতে হোক না কেন, তা আমি করব। কোনো কিছুই তখন বাধা নয়। কারণ, ততক্ষণে জেনে গেছি আমার লক্ষ্য কী এবং ভালো লাগাটাই–বা কী। তাই সব সময় লক্ষ্য খুঁজে বের করুন, বাকিটা হলো লেগে থাকা।

আমার দ্বিতীয় নিয়ম হলো নিজেকে কখনো ছোট ভাববেন না। আপনাকে পথ পাড়ি দিতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। আমি কেবল ছবিতে অভিনয় করার কথাই ভাবিনি, আমি কেবল মুভি স্টার হতে চাইনি। আমি ছবির নামের চেয়েও বড় কিছু হতে চেয়েছি। আমি চেয়েছি সর্বোচ্চ সম্মানীর এন্টারটেইনার হতে। আমি আসলে আরেক জন ওয়েইন (জনপ্রিয় মার্কিন অভিনয়শিল্পী) হতে চেয়েছি। এতে ভুলটা কোথায়? কখনোই নিজেকে ছোট ভাববেন না, বিশাল ভাবুন।

তৃতীয় নিয়মটি হলো, নিন্দুকদের থোড়াই কেয়ার করুন। এটা খুবই স্বাভাবিক, আপনার লক্ষ্য যখন বিশাল, স্বপ্ন আকাশছোঁয়ার এবং উদ্দেশ্য বৃহৎ, তখন পাছে লোকে কিছু বলবেই। তারা বলবে, এ তো অসম্ভব। আমার বয়স যখন ১৫ এবং যখন আমি বডিবিল্ডার হয়ে উঠলাম, তখন থেকেই এর শুরু। বডিবিল্ডার হওয়ার পর বললাম, আমি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চাই, আমি মিস্টার ইউনিভার্স হতে চাই। আমার কথা মাটিতে পড়তে না পড়তেই নিন্দুকেরা বলতে শুরু করল, মাথা ঠিক আছে? বডিবিল্ডিং হলো আমেরিকান খেলা, যত সব পাগলের প্রলাপ, ওসব ভুলে যাও। তারপর আমি বডিবিল্ডিংয়ে ১৩ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলাম। তখন চাইলাম, বিনোদনের ময়দানে কিছু করব। সবাইকে বলে বেড়ালাম, আমি রেগ পার্কের মতো হতে চাই। আমি চাই ‘হারকিউলিস’ হতে আর ছবিতে নাম লেখাতে।

আমি যখন এজেন্ট আর ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বললাম, তখন তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল এ রকম, ‘ওহ্ আর্নল্ড, তোমার কথা বড় হাস্যকর শোনাচ্ছে!’, ‘তুমি এই লাইনে সেরা হতে চাইছ?’, ‘প্রথমে তোমার দেহটার দিকে তাকাও। তুমি তো অতিকায়, রীতিমতো দৈত্য!’, ‘তোমার উচ্চারণও তো জঘন্য। তুমি এবার আসতে পারো। জীবনে কোনো ছবি দেখেছ, যেখানে তারকারা জার্মান উচ্চারণে কথা বলে?’, ‘হবে না। সব ভুলে যাও।’, ‘তোমার নামটা যেন কী? শোয়ার্টজেন, শ্নিটজেল বা এ রকম কিছু তো? দর্শক যখন শুনবে শোয়ার্টজেন-শ্নিটজেল নামের এক লোক ছবিতে অভিনয় করছে, তখন তো সিনেমা হলে তুলকালাম বাধাবে!’ এখনো দৃশ্যগুলো চোখে ভাসে। কল্পনা করুন, যেখানে যাই, সেখানেই লোকজন বলে, তোমাকে দিয়ে হবে না। সব ভুলে যাও। ভাগ্যিস, আমি ওসব কানে তুলিনি। আমি অভিনয়ের ক্লাসে ভর্তি হলাম, ইংরেজি শিখতে শুরু করলাম, এমনকি আমার উচ্চারণ ভুলে যাওয়ার ক্লাসও করলাম। সারা দিন বিড়বিড় করতে লাগলাম, ‘আ ফাইন ওয়াইন গ্রোজ অন আ ভাইন।’


একদিন দুম করে একটা মওকা পেয়ে গেলাম আমি। সুযোগ হলো টেলিভিশন শোতে অংশ নেওয়ার। ছোট্ট একটা পার্ট, তারপর আরও একটি ছোট পার্ট। তারপর নাম হলো পাম্পিং আয়রন আর স্টে হাংরি ছবিতে কাজ করে। অবশেষে বড় পরিসরে নাম ফাটল কোনান দ্য বারবারিয়ান ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, সংবাদ সম্মেলনে এর পরিচালক অকপটে স্বীকার করলেন, ‘পেশিবহুল শোয়ার্জেনেগারকে না পেলে অন্য কাউকে নিয়ে ওর মতো পেশি বানিয়ে নিতে হতো।’ টার্মিনেটর ছবিতে অভিনয় করার পর জেমস ক্যামেরন বললেন, ‘এই ছবির “আই উইল বি ব্যাক” সংলাপটি সিনেমার ইতিহাসে বিখ্যাত হয়েছে শোয়ার্জেনেগারের অদ্ভুত উচ্চারণের কারণে। ও সংলাপটি উচ্চারণ করেছিল একদম যন্ত্রের মতো!’ বুঝতেই পারছেন, নিন্দুকেরা যেসব নিয়ে নিন্দা করেছিল, সেসবই কেমন মূলধন হয়ে উঠল। উন্নাসিক নিন্দুকদের ছায়াও মাড়াবেন না।

আমার চতুর্থ নিয়ম হলো, চোখ-কান বুজে কাজ করুন। আপনি কখনোই ব্যর্থ হতে চাইবেন না, যখন আপনি কঠোর পরিশ্রম করবেন। আপনি কোন পেশায় কী কাজ করছেন, তা কোনো ব্যাপারই নয়। নো পেইন, নো গেইন। শুনুন, আমি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দিনে পাঁচ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নিতাম, একটা নির্মাণ-ব্যবসা চালাতাম, রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম আবার কলেজেও যেতাম এবং অভিনয়ের ক্লাসে ঢুকতাম রাত ৮টায়, বের হতাম রাত ১২টায়। কাজগুলো চালিয়ে যেতাম প্রতিটি দিন। তাই চোখ-কান বুজে কাজ করুন। সব সময় এটাই বিশ্বাস করে এসেছি, কোন পেশায় আছেন তা ব্যাপার নয়—পরিশ্রম করুন, পরিশ্রম করুন, পরিশ্রম করুন।


আমার পঞ্চম এবং শেষ নিয়মটি হলো, শুধু নেওয়া নয়, কিছু দিতেও শিখুন। যে আয়না কেবল আপনাকেই দেখায়, তা ভেঙে ফেলুন। তা করতে পারলে আয়নার ওপাশেও নজর রাখতে পারবেন। দেখতে পাবেন, লাখ লাখ মানুষ আপনার সহযোগিতার অপেক্ষায় আছে। এ কারণে আমি কিছু দেওয়ার সুযোগ পেলে লুফে নিই। আমি স্পেশাল অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। মাদক, গ্যাং আর মারামারিতে মত্ত শিশু-কিশোরদের নিয়ে কাজ করেছি। আমরা চাইলেই সমাজ কিংবা আশপাশের স্কুল ধরে কাজ করতে পারি। কারণ, দিন শেষে এর দায় তো আমাদের কাঁধেই বর্তায়। লক্ষ্য ঠিক করুন, চিন্তার জগৎ বড় করুন, নিন্দুকদের এড়িয়ে চলুন, চোখ-কান বুজে কাজ করুন এবং দিতে শিখুন। পৃথিবীটা বদলে দিন। কারণ, আমরা না করলে কে করবে? এখনই না করলে কখন?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Post Top Ad

{SCOpenGraph image=http://site.com/link-to-homepage-image.jpg}