২৪ বছর পর অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেন আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। চাঞ্চল্যকর চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। র্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কারণসহ সোহেল হত্যায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন আশীষ।
রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আশীষ জানান, ১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে আশীষ ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত নানান অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। একপর্যায়ে ক্লাবটি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। সেখানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। তিনি মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে মিটিং করতে এই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে বান্টি ও আশীষের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সখ্য তৈরি হয়। এই তিনজন ক্লাব ব্যবহার করে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের পাশে ছিল সে সময়ের বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ বনানী জামে মসজিদ। নিহত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বনানী মসজিদের কমিটি নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবের এ ধরনের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এরপর তিনজন মিলে সোহেলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেটার দায়িত্ব দেওয়া হয় ইমনকে।’
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভোর ৩টার দিকে বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৫৯। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আশীষ রায় চৌধুরী গুলশানের যেই ফ্ল্যাটে আত্মগোপনে ছিলেন সেটি তাকে ভাড়া করে দেন স্বনামধন্য একটি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। গুলশানের ‘আ’ অদ্যাক্ষরের পাঁচ তারকা ওই হোটেলের এমডির সঙ্গে আশীষের সুসম্পর্ক ছিল। সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর কানাডায় পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন আশীষ। এ জন্য ৭ এপ্রিলের একটি ফ্লাইটের টিকিটও কেটেছিলেন তিনি।
গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আশীষের কাছ থেকে ২২ বোতল বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ১৪ ক্যান বিয়ার ও সিসা সরঞ্জাম, একটি আইপ্যাড, ১৬টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, দুটি আইফোন ও দুই লাখ টাকা ও নেশা সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। এ ছাড়া আটক হন উঠতি এক মডেলসহ দুই নারী। রাতেই এই তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয় র্যাব সদরদপ্তরে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন