বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও-‘হু’ বলছে, করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯-এ আক্রান্তের মরদেহ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। করোনায় মৃতের দেহ থেকে করোনা সংক্রমিত হওয়ার কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত ‘হু’ পায়নি। মরদেহ সৎকারের বিষয়ে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন বা সৎকার করার একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে আইইডিসিআর। ‘আসুন মৃত ব্যক্তিদের সম্মান দিই। আতঙ্কিত না হই। করোনাভাইরাসে যারা মারা যাচ্ছেন তারা তো আমাদেরই কেউ। শেষ বিদায়টুকু সম্মানের সঙ্গে সম্পন্ন করি’- এরকম স্লোগান গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এটি আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটিকে মরদেহ সৎকারে প্রতিটি উপজেলায় ১০ জন করে স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচন করে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
হু যা বলছে : ২৪ মার্চ দেওয়া তার নির্দেশনায় বলছে, কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় মরদেহের নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ফর দ্য সেফ ম্যানেজমেন্ট অব অ্যা ডেড বডি ইন দ্য কন্টেক্সট অব কভিড-১৯) করা সম্ভব। হেমোরেজিক ফিভার (যেমন : ইবোলা, মারবার্গ) ও কলেরা ছাড়া অন্য কোনো রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তির দেহ থেকে সাধারণত রোগের সংক্রমণ ঘটে না। যারা করোনায় মৃত ব্যক্তির দেহ তত্ত্বাবধান (যদি ময়নাতদন্ত করা হয়ে থাকে) করবেন, তাদের নিরাপত্তা অবশ্যই প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে। যাতে তাদের হাত পরিষ্কারের ব্যবস্থা ও পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) থাকে, তাড়াহুড়ো করে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা উচিত নয়। যারা মৃতদেহ দাফনের জন্য প্রস্তুত করবেন, তাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যিনি গোসল করাবেন তিনি মেডিকেল মাস্ক, গ্লাভস, ডিসপোজেবল গাউন ও চোখে গগলস পরবেন। মৃতদেহ কাপড় দিয়ে মোড়ালেই হবে। কোনো ব্যাগের দরকার নেই। তবে, যদি মরদেহ থেকে অতিরিক্ত তরল পদার্থ বের হতে থাকে, তাহলে ব্যাগের প্রয়োজন হতে পারে। মৃতদেহে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছিটানোর দরকার নেই; মৃতদেহ পরিবহনের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো পরিবহনের দরকার নেই; পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজনরা যদি শুধু দেখতে চান, তাহলে সতর্ক অবস্থানে থেকে তারা দেখতে পারবেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ছোঁয়া যাবে না। মরদেহ দেখা শেষে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে; ৬০ কিংবা এর ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদের সরাসরি মরদেহের সংস্পর্শে যাওয়া উচিত নয়; নিজ নিজ ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী জানাজা, দাফন বা সৎকার করা যাবে। যারা মরদেহ দাফন করবেন, তাদের গ্লাভস পরে নিতে হবে এবং কাজ শেষে গ্লাভস খুলে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, ডব্লিউএইচওর নির্দেশনার পর এ বিষয়ে গতকাল তারা সাতটি নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছেন। এগুলো পাঠানো হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আল-মারকাজুলের কাছে।
এ নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- মৃতদেহ নিজ নিজ ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী জানাজা, দাফন বা সৎকার করা যাবে; মৃতদেহের গায়ে কোনো প্রকার রাসায়নিক বা জীবাণুনাশক ছিটানোর দরকার নেই; মৃতদেহ পরিবহনের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো পরিবহনের দরকার নেই; মৃতদেহ যিনি গোসল করাবেন তিনি একটি মাস্ক, একজোড়া লম্বা গ্লাভস এবং একটি ডিসপোজেবল/পানি নিরোধী গাউন পরিধান করবেন। মৃতের গোসল শেষে সঙ্গে সঙ্গেই নিজে ভালোভাবে সাবান দিয়ে গোসল করে নেবেন। তার পরিধান করা কাপড়-চোপড় সাবান পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে; কবর দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো সতর্কতা নেই; আত্মীয়স্বজন কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে ও মাস্ক পরে লাশ দেখতে পারবেন, তবে মৃতকে স্পর্শ করা যাবে না। যদি কোনো কারণে মৃতের শরীর স্পর্শ হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই সাবান ও পানি দিয়ে দুই হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন এবং আজকের দিন পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়নি যে, মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
স্থানীয় পর্যায়ে মৃতদেহ সৎকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচন ও তাদের প্রশিক্ষণের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা আল-মারকাজুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন