দেশের কোনো সরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো বুকের হাড় না কেটে ২৫ আগস্ট সফলভাবে হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এরই ধারাবাহিকতায় মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় সম্পন্ন হলো দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) ডা. আশরাফুল হক সিয়ামের নেতৃত্বে সম্পন্ন করা হয়েছে দ্বিতীয় এই অস্ত্রোপচার।
তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজারের ৪০ বছর বয়সী মো. মতিন হার্টের দুটি ব্লক নিয়ে গত ২৫ আগস্ট আমাদের সার্জারি ইউনিট-০৯ এ ভর্তি হন। আমরা ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে মিনিমাল ইনভ্যাসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি অপারেশন করে দুইটা গ্রাফট দেই অফ পাম্প বেটিং হার্টে। সফলভাবে অপারেশনের পর তৃতীয় দিনের মধ্যেই মতিন সাহেব বাড়ি ফিরে যাওয়ার মতো সুস্থ হয়ে ওঠেন।’
২ সেপ্টেম্বর সকালে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। এই অপারেশন পদ্ধতি সম্পর্কে ডা. আশরাফুল হক সিয়াম বলেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলা হয় মিনিমাল ইনভ্যাসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি (এমআইসিএস)। এই পদ্ধতিতে বুক না কেটে ছোট ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার করা হয়।’
এই চিকিৎসা পদ্ধতির ঝুঁকি সম্পর্কে ডা. সিয়াম বলেন, হৃদরোগের যেকোনো অপারেশনই ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ বা ঝুঁকি থাকে। কিন্তু প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতি বা অস্ত্রোপচার পদ্ধতি থেকে এমআইসিএস পদ্ধতিতে ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ তুলনামূলক কম থাকে। কারণ রক্তক্ষরণ কম হয়, অন্যান্য সংক্রমণের আশঙ্কাও তেমন থাকে না। একইসঙ্গে এই পদ্ধতিতে রোগী খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং বাড়ি ফিরে যেতে পারেন অস্ত্রোপচারের পরদিনই। সবচেয়ে বড় কথা, এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারে রোগীর আতঙ্ক ও প্রাণের ঝুঁকি— দু’টিই কম থাকে। সময় এবং খরচও অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় কম।
ডা. সিয়াম আরো বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত কিছু দেশের অল্পসংখ্যক হাসপাতালে এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও এখনো এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয় না। কিছু হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও সরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো আমরাই এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপাচার করছি। এটি একটি বিশাল সফলতা বলে আমরা মনে করি।’
অস্ত্রোপচার বিষয়ে ডা. আশরাফুল হক সিয়াম বলেন, বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় প্রচলিত যে পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে, তাকে বলে ‘কনভেনশনাল হার্ট সার্জারি’। ওই পদ্ধতিতে বুকের মাঝখান বরাবর কেটে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু এমআইসিএস পদ্ধতিতে এর প্রয়োজন হয় না। একে হৃদযন্ত্রের ল্যাপরোস্কোপি বলা যেতে পারে। খুব অল্পসংখ্যক সার্জনই এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে থাকেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন