স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্নের রাজত্বে সত্যের চেয়ে আরও কিছু রহস্য থেকে যায়। এটা স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের একটি ক্ষেত্র যা অধ্যয়ন করা কঠিন। কারণ আমাদের প্রত্যেকের একটি অনন্য স্বপ্নের পৃথিবী রয়েছে যা বিশ্বস্ততার সাথে আমাদের মনের ভেতর নথিভুক্ত। এর বাহিরে ভিন্ন কিছু দেখলেই তা আমাদের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দেয়। এই দুঃস্বপ্ন দেখার পেছনেও রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও গবেষণালব্ধ কারণ।
ঘুমের মধ্যে কখনো ভয় পেয়ে জেগে উঠেছেন আপনি? কিংবা কোনো ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছেন, যা দেখে আপনি ঘেমে গেছেন? ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর নিজেও কিছুক্ষণের জন্য বুঝতে পারেননি যে আপনি বাস্তবে আছেন নাকি স্বপ্নের ভেতর!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দিনের ক্লান্তি, চিন্তা আমাদের উপর এমন একটা প্রভাব ফেলে যে, ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্নে ফিরে আসে সেগুলো। এই দুঃস্বপ্নের মোকাবিলা করা সহজ নয়। দুঃস্বপ্ন অনেক রকমের হয় এবং এগুলো আমাদের বাস্তব জীবনের পরিস্থিতির অনেকটাই প্রতিফলন।
স্বপ্নের মধ্যে অনেক সময় মনে হয় যে, আমরা কোনো ঘরে বন্দি আছি। সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কোনো গোলক ধাঁধায় হারিয়ে গেছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত এটি আমাদের বাস্তব জীবনে কোনো পরিস্থিতিতে আটকে থাকা বা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়কে প্রতিফলন করে।
অনেক সময় পানিতে ডুবে যাওয়া বা কোনো জায়গা থেকে পড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। কোনো কঠিন পরিস্থিতি ঠিক মতো সামলাতে না পারলে বা কোনো পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে এরকম দুঃস্বপ্ন দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর কারো সঙ্গে যোগাযোগে হলেও এ ধরনের স্বপ্ন দেখা যেতে পারে।
দুঃস্বপ্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো নগ্ন বা এমন পোশাকে নিজেকে সবার সামনে দেখা, যা আপনার নিজ সত্তাকে আঘাত করতে পারে। এ ধরনের স্বপ্ন সাধারণত আবেগকে প্রতিফলিত করে থাকে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি স্বপ্নে নগ্ন আবস্থায় থাকলেও আত্মবিশ্বাসী থাকেন, তার মানে আপনি বাস্তব জীবনে নিজেকে নিরাপদ মনে করেন।
আপনি যদি কিছু লুকিয়ে থাকেন বা ছদ্মবেশে থাকেন, তাহলে আপনি স্বপ্নে সেই রকম কিছু দেখার জন্য তৈরি থাকুন। দুঃস্বপ্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজেকে আটকে যেতে দেখা। আমাদের মাথায় প্রচণ্ড পরিমাণে কোনো কিছু নিয়ে চিন্তাভাবনা চললে এ ধরনের দুঃস্বপ্ন সেটাকে প্রতিফলন করে।
স্বপ্নে ভূমিকম্পে আটকে যাওয়া বা সুনামির কবলে পড়া আসলে বাস্তব জীবনে কোনো বিরাট অশান্তির মুখোমুখি হলে আপনি কতটা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন তা বোঝায়।
বহু বছর কেটে গেছে, কিন্তু তার পরেও যেন স্বপ্নে কিছুতেই আপনি স্কুলের পরীক্ষা দিয়ে উঠতে পারছেন না। আপনি যে বিষয়টি সবচেয়ে অপছন্দ করেন সেই পরীক্ষায় আপনি দেখলেন হয় সময় পেরিয়ে গেছে বা আপনি ফেল করেছেন। আপনি বাস্তবে যা অর্জন করছেন আদৌ সেটি প্রাপ্য ছিল কিনা এটি তার প্রতিফলন।
যখন আপনি কোনো বাড়ির স্বপ্ন দেখেন, সেটি সাধারণত আপনার নিজের উপলব্ধি এবং আপনাকে প্রতিফলিত করে। যদি দুঃস্বপ্নে আপনার বাড়ি এবং তার ভিতরের জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখেন, তা হলে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অনুভূতিকে বোঝাতে পারে।
স্বপ্নে কেউ আপনার পিছনে পড়ে কিংবা আপনি কোনো কিছু থেকে পালাচ্ছেন এটি অ্যাড্রিনালিন-ইন্ডিউশিং দুঃস্বপ্নের মধ্যে অন্যতম। কেউ মারতে চাইছে কিংবা আপনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালাচ্ছেন, এই দুঃস্বপ্ন আপনার বাস্তব জীবনে আপনি কোনো বিপদে আছেন কিংবা ভয়ে আছেন কোনো কিছুর, সেটা বোঝায়।
ক্যারল ওয়াশারম্যান নামের এক গবেষক জানান, যে যে রাতে তিনি চিংড়ি দিয়ে ডিনার সারতেন, সেসব রাতেই তিনি ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে বিশ্রামহীন রাত পার করতেন। পরবর্তীতে তিনি চিংড়ি খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং সে সব দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটান।
এর পেছনে যেটা গবেষণালব্ধ ফলাফল তিনি জানালেন সেটা ছিল এমন- তার প্রচণ্ড অ্যালার্জি সমস্যা এবং সে সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন না। তাই তিনি চিংড়ি থেকেই মূলত দুঃস্বপ্নের ডানায় চেপে রাত্রি পার করতেন।
সুতরাং শুধুমাত্র অধিক দুশ্চিন্তা থেকেই নয়, অধিক অসচেতনতা থেকেও দুঃস্বপ্নের উৎপত্তি ঘটে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন